-->

Saturday, November 7, 2009

আমার প্রিয় ‘আমি' কে লেখা ( র্পব- আমার প্রেম)

আমার প্রিয় বলতে আমিই। এখনো কোন প্রয়োজনে ডানে-বায়ে তাকালে কাউকেই দেখিনা। হয়তো কেউই আমাকে ভালবাসেনা কিংবা আমি ভালবাসিনা বলে আমার কাছে আসেনা। আর আমাকে ভালবাসবেইবা কি করে , আমি নিজেইতো ভালোবাসতে জানিনা।

কাউকে না পেয়ে বহু দিন ধরে আমার নিজের সাথে নিজেই কথা বলেছি। নিজেই প্রশ্ন করেছি, আবার নিজেই সে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। এখনো তাই। হয়তো ভবিষ্যতেও তাই হবে। আজ আবার, আমার মনে জমা কিছু কষ্ট নিয়ে আমার নিজের কাছেই নিজে এক খানা পত্র লিখলাম।



০৭-১১-০৯
মাইজদী,নোয়াখালী


প্রিয় আমি,
সব সময়ই আমার মনে হয় আমাকে দিয়ে ভালবাসা হবে না, কেন যেন এমন একটা শংকা মনে কাজ করে। তবে আমার মনে যে প্রেম আসেনি তা কিন্তু নয়। চলতে চলতে অনেককেই আমার ভাল লেগেছে। কিন্তু এই ভাললাগা কখনো ভালবাসায় রুপ নেয়নি। আমার ভাললাগা গুলো ভাললাগা পর্যন্তই।


এটা আমার দুর্বলতা কিনা জানিনা। তবে আমার ধারনা, আমার এমনটি হওয়ার কারন আমার মা। আমার ছোট বেলা কেটেছে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি থানার আলেকজান্ডার এ। চর এলাকা বলে আমার মা আমাকে পড়শি কোন ছেলে মেয়ের সাথে মিশতে দিতেন না। কারণ একেতো নোংরা পরিবেশ তার উপর অশব্য গালাগালি ছিল সভাব। আর আট দশটা মা মত আমার মাও চাননি তার ছেলে এমন ছেলে মেয়েদের মিশে তাদের মত হয়ে যাক।নোংরা হোক, গালাগালি শিখুক, মারা-মারি করে হাত পা ভেঙে ঘরে আসুক।আমার ভাল চাইতেই আমার মা আমাকে তার বুকে আগলে রেখে মানুষ করতে চেয়েছেন। পারেননি যে তা কিন্তু নয়। ছোট বেলা থেকেই আমার গন্ডি ছিল এতই ছোট যে আমার কোন ব্যপারই আমার ছিলনা। আমার কখন কি প্রয়োজন তা আমার আগেই আমার মা জানতেন। আমাকে কখন খেতে হবে, কোন রং এর জামা আমার গায়ে ভাল মানাবে , আমাকে কখন গোসল করতে হবে, কখন স্কুলে যেতে হবে, স্কুলে কোন কোন ছেলে মেয়ের সাথে কথা বলতে হবে, কার কার সাথে কথা বলা চলবে না,
ইত্যাদি আমার সকল প্রকার কাজ এর রুটিন আমার মা করে দিতেন ,আর আমি ভাল ছেলের মত তা পালন করতাম। এখনো তাই।
আমার মনে পড়ে, আমি যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ,আমার বড় বোন তখন দশম শ্রেণীর। আমার বড় বোনের সাথে তার ক্লাস মেট এক ছাত্রের প্রেম হবে হবে করছে। কিন্তু মা জেনে গেলে তাদের ভাললাগা ভালবাসা পর্যন্ত গড়াতে পারেনি।
এই নিয়ে আপুকে মায়ের সে কি বকা। আপু শুধু মাথা নিচু করে মায়ের সামনে দাড়িয়ে ছিল। এর পরদিন আমার মা আমাকে ডেকে বোঝালেন প্রেম করা কত খারাপ। আমি আমার মায়ের মতই বুঝলাম প্রেম খারাপ। মা আমাকে শেষটায় বললেন প্রেম করতে হয় ডিগ্রিতে উঠে করবি।আমি আমার মায়ের বাধ্য ছেলে, তাইতো মায়ের কথা রাখতে আমি মনে প্রেম জাগাইনি, আমার ক্লাস মেট কেউ প্রেম করলে মাকে তাদের কথা বলতাম, মা বলতেন ওরা খারাপ ওদের সাথে মেলামেশা করবিনা ।আমি বাধ্য ছেলের মত মাথা নেড়ে আচ্ছা বলে মাকে সম্মতি জানাতাম। সেই থেকে আমি মেয়েদের সাথে একটা দুরুত্ব তৈরি করে চলছি। আমার মনে একটা ভয় কাজ করত আমিতে প্রেমে পড়বনা জানি কিন্তু মেয়েরা যদি আমার প্রেমে পড়ে যায় তখন মা কি বলবেন।


২০০০ সালে বাবা বদলি হয়ে নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলায় এলেন। আমি চাটখিলের ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হলাম । স্কুলে দুই শীপ্টে ক্লাস হতো ৭টা থেকে মেয়েদের আর ১২টা থেকে ছেলেদের। আমার সাথে যেন মেয়েদের দেখা বা কথা না হয় তাই মা আমাকে ১১টা ৫৫মিনেটে বাসা থেকে স্কুলে পাঠাতেন ।যদিও বাসা থেকে স্কুলে যেতে আমার ৮ তেকে ৯ মিনিট লাগত । আমি আর আমার স্যার একাত্রে ক্লাসে ঢুকতাম।
আমাকে আমার মনে আছে অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার সময় একটা মেয়ে আমাকে প্রতিদিনই চকলেট দিত আমি বোকা ছেলের মত নিতাম , মেয়েটা আমাকে কি কি কথা বলত তা এখন আর মনে নেই। তবে তার মনেযে ভালবাসা ছিল তা বুঝতাম। মেয়েটা আমাকে চকলেট দিলে আমি নিয়ে এসে মাকে দিতাম। মেয়েটা কি কি বলত তার সবই মাকে বলতাম। আমাকে মা শুধু বলতেন কাল থেকে এই মেয়ের থেকে দুরে থাকবি। আমি তাই চেষ্টা করতাম।ফলাপল আমার ও আমার মায়ের বিজয়।
২০০৩ সাালে মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হলাম নোয়াখালী সরকারী কলেজে। আমার জন্যই নোয়াখালীর মাইজদীতে বাসা নেওয়া হলো। উচ্চমাধ্যমিকে পড়তে এসে দেখলাম আমার সাথের ক্লাসমেটদের সাথে সকল প্রকার চিন্তাধারার অনেক দূরুত্ব। আর তাই আমি একা একাই কলেজে যেতাম আবার একাই চেলে আসতাম। পড়ালেখার প্রয়োজনে কারো সাথে কথা হলেও তা খুবই সামান্য।
২০০৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ভর্তি হলাম নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। বিষয় নিলাম ব্যবস্থাপনা।
 আমি আমার মায়ের কথা রাখতে পারিনি, ডিগ্রিতে উঠেও আমি প্রেম করতে পারিনি । স্যরি মা।

1 comments: